অনলাইন ডেস্ক: অবশেষে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ শুরুর অনুমতি মিলেছে। মৌসুমের ৩ মাসের মাথায় শুক্রবার সকাল হতে টেকনাফের দমদমিয়া ঘাট হতে সেন্টমার্টিনে আসা-যাওয়ার অনুমতি পেয়েছে এমভি পারিজাত ও এমভি রাজহংস নামে দুটি জাহাজ।
বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে প্রশাসনের সকল সেক্টর ও পর্যটন সংশ্লিষ্টদের এক বৈঠকে আলোচনা শেষে এ সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সমন্বয়ক ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. আবু সুফিয়ান।
কক্সবাজার ট্যুরস অপারেটর এসোসিয়েশন (টুয়াক) সাধারণ সম্পাদক এ কে এম মনিবুর রহমান টিটু জানান, নাফ নদীর নাব্যতা-সংকট ও নদীতে একাধিক বালুচর জেগে ওঠার তথ্য পেয়ে গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারে আয়োজিত এক সেমিনারে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোকাম্মেল হোসেন টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেন। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এ নৌ-রুটে জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকবে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি।
ফলে, অক্টোবর থেকে পর্যটন মৌসুম শুরু হলেও ভর মৌসুমের তিন মাসেও এ নৌ-রুটে জাহাজ চলাচল শুরু হয়নি। প্রশাসনের দপ্তরে দপ্তরে নানা ভাবে যোগাযোগ করেও টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের কোন সিদ্ধান্ত না আসায় দ্বীপে বসবাসরত স্থানীয় বাসিন্দাসহ হোটেল-রেস্টুরেন্টে মালিক ও এ রুটে পর্যটকবাহী জাহাজে দায়িত্বরতদের মাঝে হতাশা ও দুশ্চিন্তা দেখা দেয়।
সি-ক্রুজ অপারেটর অনার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (স্কায়াব) সভাপতি তোফায়েল আহমদ জানান, বুধবার (১১ জানুয়ারি) আন্ত:মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হওয়ার কথাছিল। নৌ-সচিব মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়-বিভাগের প্রতিনিধি, বিজিবি ও কোস্টগার্ডের প্রতিনিধি ও পর্যটন সচিব মোকাম্মেল হোসেনের উপস্থিতিতে বুধবার বিকেলে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কোন সিদ্ধান্ত দেয়নি তারা।
সভায় জানানো হয়, স্থানীয় ভাবে কক্সবাজার জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, বিজিবি, কোস্টগার্ড, পুলিশ, জনপ্রতিনিধিসহ সভার সমন্বয়ে সার্বিক বিষয়ে পর্যালোচনা করে জাহাজ চলাচলে অনুমতি দেয়া যাবে কিনা তা ঠিক করবে।
এডিএম মো. আবু সুফিয়ান বলেন, আন্ত:মন্ত্রণালয়ের বৈঠকের নির্দেশনা মতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ নির্বিঘ্নে চলাচলের অনুমতি বিষয়ক আলোচনা সভা করা হয়। সভায় সবার সিদ্ধান্ত মতে শুক্রবার সকাল হতে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ ফিটনেসসহ প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র হালনাগাদ থাকা সাপেক্ষে চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়। সকল কাগজপত্র উপস্থাপন করতে পারায় প্রথমদিন এমভি পারিজাত ও এমভি রাজহংস নামে দুটি জাহাজ চলাচলের অনুমতি পায়। বাকি জাহাজগুলোও পর্যায়ক্রমে অনুমতি দেয়া হবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় ট্যুরিস্ট পুলিশের এসপি, বিআইডাব্লিউটিএ, পরিবেশ অধিদপ্তর, গোয়েন্দা সংস্থা, সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, টু্য়াকসহ পর্যটন সেবায় সংশ্লিষ্ট সকল সংগঠন নেতৃবৃন্দ এসময় উপস্থিত ছিলেন।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপ) চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, প্রবালদ্বীপ অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ পর্যটন ব্যবসার উপর নির্ভরশীল। কিন্তু মৌসুম শেষ হতে চললেও সেন্টমার্টিনে টেকনাফ থেকে জাহাজ না আসার দ্বীপে পর্যাপ্ত পর্যটক আসেনি। ফলে, এখানকার জনজীবনে স্থবিরতা নেমে এসেছে। শুক্রবার হতে এ রুটে জাহাজ চলাচল শুরু হচ্ছে জেনে দ্বীপের ব্যবসায়ীসহ সকলের মাঝে আনন্দ দেখা দিয়েছে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, বিগত তিন মাস টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় পর্যটক সমাগম কমছিলো দ্বীপে। এতে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও লোকাল লোকজন আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের প্রচেষ্টায় শুক্রবার সকাল হতে জাহাজ চলাচলের সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামী দিনগুলোতে পর্যটন সংশ্লিষ্ট সকলের হতাশা কেটে যাবে বলে আশা করছি।
-ইত্তেফাক
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।